চিলির মূল ভূখণ্ড থেকে প্রায় ৩,৫০০ কিলোমিটার দূরে ইস্টার দ্বীপ (স্থানীয় নাম রাপা নুই, Rapa Nui) নামে এক রহস্যময় দ্বীপ রয়েছে ।
চিলির মূল ভূখণ্ড থেকে প্রায় ৩,৫০০ কিলোমিটার দূরে ইস্টার দ্বীপ (স্থানীয় নাম রাপা নুই, Rapa Nui) নামে এক রহস্যময় দ্বীপ রয়েছে ।
এই দ্বীপে আছে প্রায় ৯০০টিরও বেশি বিশাল পাথরের মূর্তি, যেগুলোকে বলা হয় Moai (উচ্চারণ: মো-আই)।
প্রত্যেকটি মূর্তির উচ্চতা ১০–৩৩ ফুট পর্যন্ত, ওজন ৮০ টন পর্যন্ত।
মূর্তিগুলো একধরনের আগ্নেয় পাথর (volcanic tuff) দিয়ে তৈরি, যা দ্বীপের Rano Raraku আগ্নেয়গিরি থেকে কেটে আনা হয়েছিল।
মূর্তিগুলোর মুখ সাধারণত লম্বা, কান বড়, আর চোখের দৃষ্টি একদিকের দিকে — যেন কোনো দেবতাকে বা দিগন্তকে উদ্দেশ্য করে তাকিয়ে আছে।
এদের অনেকের শরীরের অংশ মাটির নিচে চাপা পড়ে গেছে — ২০১২ সালে খননের সময় দেখা যায় যে, Moai মূর্তিগুলোর সম্পূর্ণ দেহ আছে, শুধু মাথা নয়!
এই মূর্তিগুলো তৈরি করেছিল রাপা নুই জাতি — একটি প্রাচীন পলিনেশিয়ান সম্প্রদায়, যারা সম্ভবত খ্রিষ্টীয় ১১০০–১৫০০ সালের মধ্যে এখানে বসতি গড়েছিল।
সবচেয়ে বড় রহস্য হলো —
এত বিশাল পাথর কাটা, খোদাই করা ও এক স্থান থেকে আরেক স্থানে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হলো কীভাবে?
বিজ্ঞানীদের ধারনা,
তারা দড়ি ও কাঠের রোলার ব্যবহার করে পাথরগুলো গড়িয়ে নিয়ে গিয়েছিল।
কিছু গবেষক বলেন, মূর্তিগুলোকে “হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়া” হতো — একপাশে টান, তারপর অন্যপাশে, ধীরে ধীরে সামনে সরিয়ে (এই কৌশল আজ পরীক্ষায় সফল প্রমাণিত হয়েছে)।
স্থানীয়রা বিশ্বাস করত, “Mana” নামে এক আধ্যাত্মিক শক্তির মাধ্যমে মূর্তিগুলো নিজেরাই হাঁটত।
Moai মূর্তিগুলো পুর্বপুরুষদের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে বানানো হয়েছিল বলে, ধারণা করা হয়।
প্রতিটি মূর্তি এক একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব, নেতা বা আধ্যাত্মিক গাইডের প্রতীক।
তাদের বিশ্বাস ছিল — এই মূর্তিগুলো দ্বীপের মানুষের ওপর নজর রাখে ও তাদের রক্ষা করে।
এখন দেখলে মনে হয়, অনেক মূর্তি সমুদ্রের দিক থেকে গ্রামের দিকে মুখ করে আছে, যেন গ্রামের মানুষদের পাহারা দিচ্ছে।
রাপা নুই জনগণ তাদের সব বন কেটে ফেলেছিল, এই মূর্তিগুলো বানানো ও পরিবহনের জন্য।তাই সময়ের সাথে সাথে দ্বীপে বন উজাড়, মাটি ক্ষয়, কৃষির পতন ও গৃহযুদ্ধ শুরু হয়।
১৭শ শতাব্দীর দিকে তাদের সভ্যতা ধ্বংস হয়ে যায়, আর ১৮শ শতাব্দীতে ইউরোপীয় নাবিকরা এসে এই দ্বীপ আবিষ্কার করে।
১৭২২ সালের ইস্টার রবিবারে একজন ডাচ অভিযাত্রী (Jacob Roggeveen) দ্বীপটি খুঁজে পান — সেখান থেকেই এর নাম হয় Easter Island।
এখনও অনেকে প্রশ্ন করেন—
কেন কিছু মূর্তি অসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে আছে?
কেন কিছু সমুদ্রের দিকে মুখ করে, আবার কিছু গ্রামের দিকে?
“Mana” শক্তির ধারণা কি কোনো সত্যিকারের প্রাচীন প্রযুক্তির ইঙ্গিত?
কেউ কেউ মনে করেন, এটি ভিনগ্রহবাসীর সাহায্যে তৈরি হয়েছিল
যদিও তার কোনো প্রমাণ নেই — তবে রহস্য এখনো অমীমাংসিত।
আজ ইস্টার দ্বীপ UNESCO World Heritage Site হিসেবে স্বীকৃত।
দ্বীপটি এখন এক প্রতীক — মানুষের সৃষ্টিশীলতা, বিশ্বাস, এবং প্রকৃতির প্রতি দায়বদ্ধতার প্রতীক।
বিশ্বজুড়ে মানুষ আসে সেই রহস্যময় চোখের দৃষ্টি দেখতে...
যেখানে পাথরের নিঃশব্দ মুখগুলো যেন আজও কিছু বলতে চায়...কিন্তু কি বলতে চায়... সেই প্রশ্নের কোনো জবাব জানা নেই।

বাংলা লিপির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url