সীমান্তের শেষ বসতি৷
সীমান্তের শেষ বসতি৷
বান্দরবানের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে, মেঘ আর পাহাড়ের মাঝে লুকানো একটি ক্ষুদ্র গ্রাম — রুমুমং। চারদিকে উঁচু পাহাড় আর বাঁকানো পথ। ঘন জঙ্গলের ছায়ায় দিনের আলো ঢোকে দেরিতে, আর সন্ধ্যা নামে আগেভাগেই। এই গ্রামে মোবাইল টাওয়ার নেই, নেই বিদ্যুৎ বা শহরের কোন কোলাহল। এখানে প্রকৃতি নিজের মতো করে বেঁচে থাকে, আর মানুষ প্রকৃতির নিয়মেই।
গ্রামটির শেষ প্রান্তে থাকতো আলি থুই মারমা, ১৭ বছরের এক মেয়ে। ছোটবেলায় তার বাবা সীমান্তরক্ষী বাহিনীতে কাজ করতেন, কিন্তু এক পাহাড়ি অভিযানে হারিয়ে যান। সেই থেকে আলি থুইর মনে সীমান্ত মানেই রহস্য, ভয় আর অজানা ইতিহাস।
প্রতিদিন সূর্য ডোবার আগে সে চলে যেত গ্রাম থেকে আরও দক্ষিণ-পূর্বে, যেখানে এক সরু পাথুরে পথ গিয়ে শেষ হয়েছে জঙ্গলের মধ্যে। সেখানেই ছিল তার প্রিয় জায়গা — “শেষ আলো পাহাড়”। এই পাহাড় থেকে নাকি মিয়ানমারের ছোট ছোট গ্রাম দেখা যায় পরিষ্কার আবহাওয়ায়। দাদু বলতেন, এই পাহাড়ই ছিল তার বাবার শেষ মিশনের পথ।
একদিন, হঠাৎ করেই গ্রামে আসে এক অপরিচিত লোক — একজন গবেষক, নাম রাহুল। শহর থেকে এসেছে, সীমান্ত অঞ্চলের হারিয়ে যাওয়া ট্রেইল আর পুরনো আদিবাসী নিদর্শন খুঁজতে। রাহুলের হাত ধরে আলি থুইর সামনে খুলে যেতে থাকে তার বাবার হারিয়ে যাওয়ার গল্প, পুরনো মানচিত্র, রহস্যময় সংকেত আর এক গুপ্ত গুহার কথা — যা সীমান্তের একেবারে শেষ প্রান্তে।
আলি থুই এবার সিদ্ধান্ত নেয়, বাবার শেষ চিহ্ন খুঁজে বের করবেই। রাহুলকে সঙ্গে নিয়ে শুরু হয় তাদের অভিযান — ঝুঁকিপূর্ণ, ক্লান্তিকর, আর অনেক অজানায় ঘেরা। মাঝে মাঝে সীমান্তের ওপার থেকে ভেসে আসে অজানা শব্দ, কখনো রহস্যময় ছায়া চোখে পড়ে, আবার কখনো জঙ্গলের গভীরে পাওয়া যায় ফেলে আসা পুরনো সামরিক জিনিসপত্র।
শেষ পর্যন্ত, এক পাহাড়ি গুহার ভিতরে তারা খুঁজে পায় আলির বাবার লেখা একটি পুরনো চিঠি — যেখানে লেখা, “আমি এখানে আছি, পাহাড় আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে।” চিঠির পাশে ছিল একটি নেকলেস, যেটা ছোটবেলায় আলিকে উপহার দিয়েছিলেন তার বাবা।
গল্পের শেষ দৃশ্যে, আলি থুই দাঁড়িয়ে থাকে শেষ আলো পাহাড়ে — হাতে বাবার নেকলেস, চোখে নতুন শক্তি। সে জানে, তার পরিচয় শুধু সীমান্তের এই ক্ষুদ্র গ্রাম নয়, সে একটি গল্পের উত্তরসূরি — যেটা সীমান্ত পেরিয়ে ইতিহাস আর হৃদয়ের ভেতর গভীর হয়ে আছে
বাংলা লিপির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url