হজ করার খরচ কত বাংলাদেশ

নারীদের উপর কখন হজ ফরজ জানুনহজ করার খরচ কত বাংলাদেশ সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান। প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে অনেকেই যান হজ করতে। তাই এই খরচ গুলো সম্পর্কে ধারণা রাখাটও গুরুত্বপূর্ণ।

হজ- করার- খরচ- কত -বাংলাদেশ

বাংলাদেশ থেকে মুসলিম প্রতি বছর মক্কায় যান হজ পালন করার জন্যে। আপনি যদি আগে থেকেই হজ পালন করার খরচ সম্পর্কে ধারণা রাখেন তাহলে তা আপনার জন্যে খুবই ভালো হবে। তাই চলুন জেনে নিই হজ করার খরচ কত বাংলাদেশ।

পেজ সূচিপত্র : হজ করার খরচ কত বাংলাদেশ

হজ করার খরচ কত বাংলাদেশ

বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর প্রায় লাখো মুসলিম হজ পালন করার সুযোগ পেয়ে থাকেন। আগামী ৪ ঠা জুন ২০২৫ সালে আবারো হজ পালন শুরু হতে যাচ্ছে। এই বার বাংলাদেশ থেকে হজ পালন করার সুযোগ রয়েছে ১ লক্ষ ২৭ হাজার ১৯৮ জন যাত্রীর। এদের মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় রয়েছেন ১৫ হাজার ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় রয়েছে ১ লক্ষ ১২ হাজার ১৯৮ জন হজ যাত্রী। সরকারি ভাবে যারা হজ করতে যাবেন তাদের খরচের হিসাব নিম্নে উল্লেখ করা হলো।

যারা সাধারণ হজ পালন করার জন্যে যাবেন তাদের জনপ্রতি টাকা দিতে হবে ৪ লক্ষ ৭৮ হাজার ২৪২ টাকা। তবে আপনি যদি দুই সিটের রুম নেন তাহলে ৬ লক্ষ ১৭ হাজার ২০০ টাকা পড়বে। ৩ সিটের রুম নেওয়া হলে ৫ লক্ষ ৭০ হাজার ৮৮০ টাকা। ৪ সিটের রুম যদি নেন তাহলে আপনার পড়বে ৫ লক্ষ ৪৭ হাজার ৭২০ টাকা। এখানে প্রাথমিক নিবন্ধন করারা সময় আপনার ৩ লক্ষ টাকা জমা করতে হবে।
হজ -কি
আর পরে প্রাক নিবন্ধন করার সময় ২৯ হাজার করে টাকা জমা করতে হবে। তারপর আপনাকে চূড়ান্ত নিবন্ধন করতে হবে এবং শর্ট প্যাকেজ গুলো নিতে হবে। তাই সব মিলিয়ে হিসাব করে উপরিউক্ত টাকা গুলোর পরিমাণে খরচ পড়ে।

২০২৫ সালের সরকারি ভাবে হজ পালন করার জন্যে দুই ভাগে খরচ ধরা হয়েছে। প্রথমটি হলো সাধারণ খরচ ১ ও পরেরটি হলো সাধারণ খরচ ২৷ সরকারি ব্যবস্থাপণায় প্যাকেজ ৪ লাখ ৭৮ হাজার ২৪২ টাকা প্যাকেজ ধরা হয়েছে। এই ক্ষেত্রে আপনি মসজিদুল হারামের ৩ কি. মি. এর আশে পাশে বাড়ি পাবেন। আর অপর প্যাকেজটি তে মসজিদুল হারামের দেড় কিলোমিটার এর আশে পাশে বাড়ি পাবেন। এতে খরচ হবে আপনার ৫ লক্ষ ৭৫ হাজার ৬৮০ টাকা করে। আর বেসরকারি ভাবে সাধারণ প্যাকেজের খরচ পড়ে ৪ লাখ ৮৩ হাজার ১৫৬ টাকা। সরকারি মাধ্যমে সাধারণ প্যাকেজ ২ এর খরচ গুলো তুলে ধরা হলো।

সাধারণ হজ প্যাকেজ ২ এর খরচ পড়ে ৫ লক্ষ ৭৫ হাজার ৬৮০ টাকা। ২ সিটের জন্যে খরচ দিতে হয় ৭ লক্ষ ৭০ হাজার ৪৫৬ টাকা।
৩ সিটের রুম নিলে তার জন্যে খরচ পড়বে ৭ লক্ষ ৫ হাজার ৫৩০ টাকা। আর আপনি যদি ৪ সিটের রুম নেন তবে আপনাকে খরচ গুনতে হবে ৬ লক্ষ ৭৩ হাজার ৭০ টাকা। হজ বিষয়ক কমিটির উপদেষ্টা এই হজ প্যাকেজ ঘোষণা করেন।

হজে প্রি রেজিষ্ট্রেশন করতে কি কি লাগে

আপনি যদি হজ করতে চান তাহলে এই কাজ গুলো অনেক আগে থেকেই শুরু হয়ে যায়। প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মুসল্লি মক্কায় যায় হজ পালন করার জন্যে। হজ পালন করার জন্যে আপনি যদি মক্কায় যেতে চান তাহলে প্রি রেজিষ্ট্রেশন করার জন্যে আপনাকে নিম্নোক্ত কাগজ পত্র গুলো লাগবে। আপনি যদি প্রাপ্ত বয়স্ক হয়ে থাকেন তবে আপনার এন আইডি কার্ড বা স্মার্ট কার্ড বা পাসপোর্টের ফটো কপির প্রয়োজন হবে। এর সাথে একটি এক্টিভ ফোন নম্বর এর প্রয়োজন পড়বে।

আবার আপনি যদি বিদেশে অবস্থানরত একজন বাংলাদেশী নাগরিক হয়ে থাকেন তবে আপনার প্রয়োজন হবে, যে দেশে বসবাস করছেন তার পাসপোর্ট এর ফটো কপি, অনলাইন জন্ম নিবন্ধন এর ফটো কপি, পাসপোর্ট সাইজে কালার ছবি, এক্টিভ ও ভেলিড ফোন নম্বর এবং সাথে লাগবে এক্টিভ ইমেইল আইডি। কোনো বাচ্চা শিশু যদি হজ পালন করতে চায় তাহলে তার জন্যে হবে অনলাইন জন্ম নিবন্ধন ফটো কপি, পাসপোর্ট সাইজের কালার ছবি, এক্টিভ ও ভ্যালিড ফোন নম্বর। আর সাথে একজন লিগ্যাল গার্ডিয়ান দিতে হবে। এই গার্ডিয়ান এর এন আই ডি কার্ডের এক কপি ফটো কপি দিতে হবে।

ওমরাহ হজ পালন করতে খরচ কত

ওমরাহ হলো একটি সুন্নাহ ইবাদত। এটি পালন করা ফরজ নয়। অনেকেই প্রতি বছর ওমরাহ পালন করার জন্যে যান। নবী করিম সা. তার জীবনে চার বার ওমরাহ পালন করেছেন। আপনি যদি বাংলাদেশ থেকে ওমরাহ পালন করতে চান তাহলে সিঙ্গেল খরচ কত পড়বে তা নিম্নে দেওয়া হলো জেনে নিন।
  • ৭ দিনের ওমরাহ খরচ করলে সর্বনিম্ন খরচ হবে ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা শুরু করে সর্বোচ্চ খরচ পড়বে ২ লক্ষ ৫৫ হাজার টাকা।
  • ১০ দিনের ওমরাহ প্যাকেজে আপনার খরচ পড়বে সর্বনিম্ন দেড় লক্ষ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৩ লক্ষ ৫৫ হাজার টাকা পর্যন্ত।
  • ১৩ দিনের ওমরাহ প্যাকেজে আপনার খরচ হবে ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৩ লক্ষ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত।
  • ১৪ দিনের ওমরাহ প্যাকেজে আপনার খরচ পড়বে সর্বনিম্ন ১ লক্ষ ৩০ হাজার থেকে শুরু করে ৩ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত।
  • ১৫ দিনের ওমরাহ প্যাকেজে খরচ পড়বে ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা শুরু করে ৩ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত।
  • ১৭ দিনের ওমরাহ খরচ পড়বে ১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৪ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত।

হজ পালন করতে কত দিন লাগে

হজ করার খরচ কত বাংলাদেশ সম্পর্কে জেনেছেন। মুসলমানদের জন্যে হজ হলো একটি ফরজ ইবাদত৷ ইসলামের পাঁচটি মৌলিক স্তম্ভ রয়েছে। তার মধ্যে একটি হলো হজ। এটি সকলের জন্যে ফরজ না হলেও যারা সমার্থ্যবান রয়েছে তাদের জন্যে এটি পালন করা ফরজ। হজের বাধ্যতা মূলক কাজ হলো তিনটি। প্রথমটি হলো ইহরাম বাধা, আর দ্বিতীয়টি হলো আরাফাত ময়দানে অবস্থান করা এবং সর্বশেষ তৃতীয়টি হলো কাবা ঘর প্রদক্ষিণ করা। আর ওয়াজিব কাজ গুলো হলো মুজদালিফায় অবস্থান করা ও সেখানে নির্ধারিত ওয়াক্তে নামাজ আদায় করা।
সাফা মারওয়া পাহাড়ে গমন করা ও শয়তানের উদ্দেশ্য পাথর নিক্ষেপ করা। কোরবানি করা। মাথা ন্যাড়া করা কিংবা মাথার চুল ছোট করা। সর্বশেষ বিদায়ী তাওয়াফ করা ও মুহাম্মদ সা. কবর যিয়ারত করা৷ এই কাজ গুলো করতে হয় ৮ ই জিলহজ থেকে শুরু করে ১২ ই জিলহজ পর্যন্ত৷ অর্থাৎ মোট সময় লাগে পাঁচ দিন পর্যন্ত। হজ পালন করার জন্যে এই পাঁচ দিন মক্কা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় অবস্থান করা বাধ্যতামূলক।

হজ কি

হজ করার খরচ কত বাংলাদেশ তা জেনেছেন। হজ শব্দটি হলো আরবি শব্দ। এর বাংলা পরিভাষিক অর্থ হলো নিয়ত করা, ইচ্ছা পোষণ করা, প্রতিজ্ঞা করা, সংকল্প করা, গমন করা, দর্শন করা ইত্যাদি৷ ইসলামি পরিভাষায়, জিলহজ মাসের ৯ তারিখ ইহরাম বেধে আরাফাতের ময়দানে অবস্থান সহ কয়েকটি নির্দিষ্ট স্থানে নির্ধারিত কয়েকটি আমল যথাযথ ভাবে আমল করে কাবা গৃহ তাওয়াফ করা কে হজ বলে। হজ হলো তিন প্রকার৷ হজ্জে ইফরাদ, হজ্জে কিরান ও হজ্জে তামাত্তু।

হজ্জে ইফরাদ হলো হজের সময় শুরু করার সময় মিকাত থেকে যদি হজের নিয়ত করে ইহরাম বাধে তবে হজের সঙ্গে ওমরাহ আদায় না করলে এই ধরণের হজ কে বলা হয় হজে ইফরাদ। আর এই ধরণের হজ কারী কে বলা হয়ে থাকে শরীয়তের ভাষায় মুফরিদ। আবার কেউ যদি একই সাথে হজ ও ওমরাহ এর নিয়ত করে ইহরাম বাধে এবং এক সাথে উভয়ই পালন করে তবে এই ধরণের হজ কে বলা হয়ে থাকে হজে কিরান।
আর হজকারী কে বলা হয়ে থাকে কারিন। প্রথমে ওমরাহ এর জন্যে ইহরাম বেধে তা পালনের পর আবার ভেঙে ৭ ই জিলহজ হজের জন্যে ইহরাম বাদলে ও হজ পালন করলে একে বলা হয় হজে তামাত্তু। এই ধরনের হজ কারী কে বলা হয় মুতামাত্তি।

হজ পালন করার নিয়ম

সারা বিশ্বের মুসলিমদের এক জমায়েত হলো এই হজ। ইসলামের পাঁচটি মৌলিক ভিত্তির মধ্যে হজ হলো চতুর্থ। হজ পালন করার জন্যে বেশ কিছু রীতিনীতি অনুশীলন করতে হয়। হজ পালন করার উদ্দেশ্যে মক্কায় প্রবেশ করা, কাবা ঘরের চারপাশে হাটা, আরাফাত ময়দানে অবস্থান করা, সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মাখখানে দৌঁড়ানো, শয়তান কে লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপ করা, পশু কোরবানি করা, মাথা ন্যাড়া করা ও বিদায়ী তাওয়াফ করা। এই হজ শত শত বছর ধরে সেই ইবরাহিম আ. এর সময় কাল থেকে শুরু হয়ে আসছে।

হজ পালন করার প্রথম রীতি হলো ইহরাম বাধা। মক্কা থেকে যারা দূরে থাকেন তাদের মক্কার একটি নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে ইহরাম বাধতে হবে। আরবি তে ইহরাম বলতে এমন এক অবস্থা কে বুঝায় যেখানে মানুষ সকল পাপাচার কাজ গুলো থেকে নিজে কে সম্পূর্ণ ভাবে বিরত রাখে। ইহরামে সাদা কাপড় পরিধান করা। চুল ও নখ না কাটা। কাবার চারপাশে প্রদক্ষিণ করতে হবে। ঘড়ির কাঁটার উল্টো দিকে সাত পাঁক দিতে হয়। সাফা ও মারওয়া পাহাড়ে দৌড়ানো। এখানে হাজিরা সাতবার দৌড়ান। আরাফাত ময়দানে অবস্থান করতে হবে। তারপর শয়তান কে পাথর নিক্ষেপ করতে হবে৷ মিনাতে শয়তানের দেয়াল রয়েছে। এখানে সাতটি পাথর নিক্ষেপ করতে হবে। পশু কোরবানি করতে হবে। তারপর চুল কেটে ইহরাম ভাঙ্গবে।

ওমরাহ হজে ফরজ কয়টি

ইসলামি পরিভাষায় হজের সময় ছাড়া অন্য কোনো সময় পবিত্র কাবাঘরে তাওয়াফ করাসহ অন্য কাজ গুলো করা কে বলা হয় ওমরাহ হজ৷ ওমরাহ হজে প্রধানত ২ টি ফরজ কাজ রয়েছে৷ প্রথম কাজ হলো ইহরাম বাধা ও দ্বিতীয় কাজ পবিত্র কাবা ঘর তাওয়াফ করা। আরো দুটি কাজ হলো যথাক্রমে সাফা ও মারওয়া পাহাড়ে সাঈ (দৌড়ানো) করা ও মাথার চুল কাটা। এই দুটি কাজ হলো ওয়াজিব।

কখন হজ পালন করা ফরজ

হজ করার খরচ কত বাংলাদেশ তা সম্পর্কে জেনেছেন। ইসলামের চতুর্থ স্তম্ভ হলো হজ পালন করা। এই হজ পালন সবার জন্যে বাধ্যতা মূলক নয়। তবে কাদের জন্যে হজ পালন করা বাধ্যতামূলক? যদি কোনো ব্যক্তির ক্ষেত্রে পাঁচটি শর্ত প্রযোজ্য হয়ে যায় তখন তার জন্যে হজ পালন করা বাধ্যতা মূলক হয়ে যায়।
ওমরাহ- হজে- ফরজ -কয়টি
শর্ত গুলো হলো মসুলমান হওয়া, মানসিক ভাবে সুস্থ হওয়া, সাবালক হওয়া, স্বাধীন হওয়া ও সামর্থ্য থাকা। আপনার ক্ষেত্রে যদি সকল শর্ত গুলো সত্যি হয়ে যায় তাহলে আপনার জীবনে কমপক্ষে একবার হলেও হজ পালন করতে হবে। এটি ফরজ কাজ।

হজ পালন করতে কোন কোন জায়গায় যেতে হয়

ইসলামি নিয়ম অনুসরণ করে আপনাকে হজ পালন করার জন্যে মিনা, আরাহফা, মুজদালিফা, হারাম শরীফ ও তৎসংলগ্ন এলাকা সাফা ও মারওয়া পাহাড়ে হজের আনুষ্ঠানিকতা সম্পূর্ণ হয়। আর তাই হজ করার জন্যে আপনাকে যেতে হবে সৌদি আরব। আপনি সেখানে সরকারি ও বেসরকারি মাধ্যমে যেতে পারেন। আপনাকে ৬ ই জিলহজ উক্ত জায়গায় উপস্থিত থাকতে হবে। আর একটানা পাঁচ দিন হজ পালনের কার্যক্রম পালন করতে হয় উক্ত স্থানে।

লেখকের শেষ মন্তব্য

প্রিয় পাঠকগণ, আজকের আর্টিকেলটি লেখা হয়েছে হজ করার খরচ কত বাংলাদেশ তা সম্পর্কে। আশা এই বিষয়ে একটা স্পষ্ট ধারণা পেয়েছেন। প্রতি বছর বিশ্বের সকল মুসলিম সহ আপনার হজ পালনের আশা আল্লাহ কবুল করুক। আপনি যেন সুস্থ ভাবে হজের সকল কাজ সম্পন্ন করতে পারেন সেই দোয়া করি। বিষয়টি ভালো লাগলে নিজের বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। ধন্যবাদ। 250109

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বাংলা লিপির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url