জোঁক এর গায়ে লবণ দিলে মারা যায় কেন


 জোঁক বনাম লবণ — রসায়নের এক বাস্তব যুদ্ধ!

জানেন কি, জোঁকের শরীরে লবণ ছিটালে কেন সে কুঁকড়ে যায় বা মারা যায়? এর পেছনে লুকিয়ে আছে এক আশ্চর্য রসায়ন—অসমোসিস (Osmosis) প্রক্রিয়া।

জোক একটি জলজ প্রাণী, যার শরীরের ভেতর পানির পরিমাণ অনেক বেশি (এই জন্যই জোঁককে হাতে স্পর্শ করলে অনেক নরম লাগে) এবং লবণের ঘনত্ব কম। যখন এর গায়ে NaCl বা সাধারণ লবণ ছিটানো হয়, তখন লবণ পানিতে দ্রবীভূত হয়ে Na⁺ এবং Cl⁻ আয়নে বিভক্ত হয়। এই আয়নগুলো চারপাশের দ্রবণের ঘনত্ব অনেক বাড়িয়ে দেয়। ফলে জোকের শরীরের কোষের ভেতরে থাকা পানি বাইরে চলে যায়, কারণ পানি সবসময় কম ঘন দ্রবণ থেকে বেশি ঘন দ্রবণের দিকে যায়—এটাই অসমোসিসের মূল রাসায়নিক নীতি।

এর ফলে জোকের কোষগুলো তাদের ভেতরের পানি হারিয়ে ফেলে, কোষের ভেতরের চাপ কমে যায়, এবং পুরো দেহ শুকিয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত কোষগুলো সঙ্কুচিত হয়ে ফেটে যায়, আর জোক মারা যায়।

এই প্রক্রিয়াটি কোনো বিষক্রিয়া নয়, বরং এক নিখাদ রাসায়নিক ভারসাম্য পরিবর্তন মাএ। রসায়নের এই মৌলিক নীতি শুধু জোকের মৃত্যুতেই সীমাবদ্ধ নয়, একই নীতি ব্যবহার করা হয় খাবার সংরক্ষণে—যেমন মাছ বা আচার শুকানোর সময় লবণ ব্যবহার করে ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি রোধ করা হয়। তাই দেখা যায়, লবণ শুধু রান্নাঘরের উপাদান নয়, এটি জীববিজ্ঞান ও রসায়নের এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যা প্রকৃতির ভারসাম্য ও জীবনের রসায়ন বোঝাতে সাহায্য করে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বাংলা লিপির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url